শরীয়তপুর জেলায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পুলিশি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সদর উপজেলায় ৫টি, নড়িয়া ৩টি, জাজিরা ৫টি, ভেদরগঞ্জ ৪টি, গোসাইরহাট ৫টি এবং সখিপুরে ৪টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে প্রধানত জমিজমা নিয়ে বিরোধ, আর্থিক লেনদেন, পারিবারিক কলহ এবং আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা কাজ করেছে।
পুলিশের তথ্য মতে, ৭টি হত্যাকাণ্ড পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে, ৪টি ডাকাতি সন্দেহে এবং বাকিগুলো জমি ও টাকা-পয়সা সংক্রান্ত কারণে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা লাশও উদ্ধার হয়েছে চারটি। মাসিক গড়ে তিনটির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি জাগিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাই এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে কাজ করছে। জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান দিপু বলেন, 'একটি হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র ভুক্তভোগী নয়, বরং অভিযুক্তদের পরিবারকেও সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয়, যা সমাজে নতুন সমস্যার জন্ম দেয়।'
পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সব মামলার তদন্ত চলছে। এর মধ্যে ৪টিতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, ২টিতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে এবং ২০টি মামলা এখনও তদন্তাধীন। তিনি বলেন, 'কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সহযোগিতাও অপরিহার্য।'
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য। এসব ঘটনা শুধু আইনের দৃষ্টিতে বিচার করা নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবনের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সামাজিক অবক্ষয় রোধ এবং এলাকার মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, এবং সাধারণ মানুষের মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।


