একবছর আগে নিশ্চয়ই এটা বললে লোকে পাগল বলত। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। কিন্তু এবার এটাই যৌক্তিক। এটাই বাস্তব। এমন নিয়ন্ত্রিত পরিবেশেই এবার হাজির হয়েছে বাঙালির চিরায়ত এক উৎসব। পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ "১৪২৭"।
বছরের শুরুর দিনটিতে শহরের লোক দলবেঁধে রমনায় যাবে না; পান্তা ইলিশ খাবে না; বাউলা গান গাইবে না; রেশমি চুরি আর লাল ফিতেতে চুল বাঁধবে না; বাঁশি আর মুখোশে নিজেকে ঢাকবে না; এটা হতেই পারে না। কিন্তু এসব কিছুই এবারের বৈশাখে নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে সবার জন্য। নতুন বছরের উৎসব করা যাবে। তবে বাইরে নয়। ঘরে। বাংলা নববর্ষ এবার এভাবে কাটবে এটা কেউ কষ্মিনকালেও ভাবতে পারেননি। বাঙালির জন্য এমন বৈশাখ বরণ আগে আর কখনও হয়নি। এবার পুলিশ রমনায় বাড়তি নিরাপত্তার ধকল সইবে না। র্যাবের ডগ স্কোয়াড টহল দেবে না।একের পর এক নিরাপত্তা ব্রিফিং মিডিয়াকে কভার করতে হবে না। রমনা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটতে পারে এমন বাড়তি উদ্বেগ নিয়ে দিনভর টেলিভিশন স্ক্রল আর অনলাইনে চোখ রাখতে হবে না; অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
ইলিশ নিয়ে এবার আর ব্যবসায়ীদের বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি দেখতে হবে না। জোড়া ইলিশ বা এক হালি ইলিশের চড়ামূল্যের খবরগুলো এবার শিরোনাম হবে না। পত্রিকাগুলো বর্ষশুরুর বিশেষ সংখ্যা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামবে না। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার নিশ্চয় করোনা মুক্ত বিশ্ব কল্পনা করে শিল্পীরা আঁকবেন ছবি। যেখানে থাকবে যে সকল যোদ্বারা দেশে দেশে করোনা রোগিদের সেবায় অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিচ্ছেন তাদের প্রতিকৃতি। থাকবে মাস্ক আর গ্লাভসের ব্যবহার। যদিও আগেই ঘোষণা দেয়া আছে, এবার সবরকম আয়োজন বন্ধ। এ পরিস্থিতি যেন কবিগুরুর সেই আহ্বানকেই মনে করিয়ে দেয়, ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’ গগন জুড়ে আজ করোনার ভয়াল থাবার বিষাক্ত ছোবল। বাংলাদেশেও সরকারি হিসাবেই প্রতিদিন রোগি বাড়ছে। আর বেসরকারি হিসাব তো অনেক দূর। করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতেই বাইরে যাওয়া বারণ। সব আয়োজন ভেতরেই সীমাবব্ধ।
তারপরও বলবো সবাইকে শুভ নববর্ষ "১৪২৭"।
ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন,সুস্থ থাকুন।

